E-sim কি? এর ভবিষ্যৎ কি?
ই-সিম কি?
ই-সিম বা E-SIM এর পূর্ণরূপ embedded SIM (এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি বা আইডেন্টিফিকেশন মডিউল বা eSIM)। e-sim সাইজে সাধারণ সিম কার্ডের তুলনায় কয়েকগুন ছোট হয়ে থাকে।
ই সিম হলো একটি ছোট প্রোগ্রামেবল চিপ যা ফোনের মাদারবোর্ড এর মধ্যে দেওয়া থাকে এবং এটি সিম কার্ড এর মত কাজ করে।
সাধারণত একটি সিম কার্ডে আমরা শুধুমাত্র একটি কোম্পানির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারি। যেমন, একটি গ্রামীণফোন সিম কার্ডে আমরা শুধুমাত্র গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বা সার্ভিস ব্যবহার করতে পারব। অন্য সিম কোম্পানির সার্ভিস বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হলে আমাদের সেই কোম্পানির সিম ব্যবহার করতে হয়।
কিন্তু ই সিম এর মাধ্যমে আপনি চাইলে যেকোন কোম্পানির সেবা বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে ফোন থেকে সিম কার্ড খুলে পরিবর্তন করতে হবে না। ই সিম এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি যেকোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন।
ই সিম কিভাবে কাজ করে
ই-সিম মূলত একটি মাইক্রোচিপ যা প্রোগ্রামেবল। অর্থাৎ আপনি চাইলে এর ভিতরে থাকা তথ্য পরিবর্তন করতে পারবেন। সাধারণ সিম কার্ড প্রোগ্রামেবল থাকেনা। অর্থাৎ চাইলেই যে কেউ এর ভিতরে থাকা সমস্ত কিছু পরিবর্তন করতে পারে না। যার ফলে আমাদের শুধুমাত্র একটি কোম্পানির সার্ভিস ব্যবহার করতে হয়।
একটি সিম কার্ডের মধ্যে সাধারণত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন বা ডাটা থাকে। যেমন ইউজার আইডি, লোকেশন, ফোন নাম্বার, ইউজার অথরাইজেশন ডাটা, পার্সোনাল সিকিউরিটি কি(key), সংরক্ষণ করা কন্টাক্ট নাম্বার এবং টেক্সট মেসেজ। যা আমরা চাইলেই পরিবর্তন করতে পারি না। এগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আমরা কন্টাক্ট নাম্বার এবং টেক্সট মেসেজ সেভ করতে কিংবা ডিলিট করতে পারি। বাকি তথ্যগুলো সিম কার্ডের মধ্যে পার্মানেন্টলি সেভ করে দেওয়া হয় যা কখনো ডিলিট করা সম্ভব হয় না। এবং এই তথ্যগুলো আমাদের ওই সিম কোম্পানির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।
কিন্তু ই সিম কার্ড যেহেতু প্রোগ্রামেবল সেহেতু একজন ব্যবহারকারী চাইলে এর সকল তথ্য পরিবর্তন করতে পারে। এটা অনেকটা ফোনের মেমোরি থেকে প্রয়োজনীয় সেভ ডিলেট বা ডিলিট করার মত। ই সিম কার্ড আপনাকে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক এর উপর ইউজার প্রোফাইল করার সুযোগ দেয়।
কিভাবে ই সিম ব্যবহার করতে হয়?
ধরুন আপনি একটি ই সিম সাপোর্টেড ফোনে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের অর্থাৎ গ্রামীণফোনের পারমিশন নিয়ে কিছু স্টেপ ফলো করে আপনার ফোনে একটি ইউজার প্রোফাইল ক্রিয়েট করতে হবে। এবং সফল হবে সব স্টেপ শেষ করার পরে আপনি ফোনের মধ্যে গ্রামীণফোনের সিমকার্ড প্রবেশ করা ছাড়াই গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক এবং সকল সেবা গ্রহন করতে পারবেন।
এতে আপনার পূর্বের ফোন নাম্বার বা সিম কার্ড এর কোন তথ্য হারাতে হবে না। অর্থাৎ আগের সিম কার্ডের সব কিছুই আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। শুধুমাত্র সিম কার্ড আলাদাভাবে ফোনে প্রবেশ করার প্রয়োজন পারবে না।
তবে আপনি চাইলে অন্য যে কোন কোম্পানির সিম কার্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্ক সার্ভিসও ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যে কোম্পানির মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চান সেই কোম্পানির সাহায্যে আপনাকে ফোনের মধ্যে পূর্বের মতোই ই সিম কার্ডটি সেটআপ করতে হবে।
এভাবে ই সিম এর মাধ্যমে দুই বা ততোধিক সিম কার্ড একটি ফোনে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আপনাকে আলাদা আলাদা সিম নিয়ে ঘুরতে হবে না। একবার সবকিছু সেটআপ করা হয়ে গেলে শুধুমাত্র এক সিম থেকে অন্য সিমে সুইচ করলেই অন্য সিম ব্যবহার করতে পারবেন।
সিকিউরিটি
সাধারণ সিম কার্ডের ক্ষেত্রে যে কেউ চাইলে আপনার ফোন থেকে সিম কার্ডটি খুলে নিয়ে অন্য কোন ফোনে সেটি প্রবেশ করে আপনার সকল পার্সোনাল তথ্য যেমন ফোন কল, মেসেজ কন্টাক্টস দেখতে পারে। যা একজন মানুষের প্রাইভেসি কে অবশ্যই প্রশ্নচিহ্নের উপরে রাখে। কিন্তু এই ই সিম কার্ড যেহেতু ফোন থেকে খোলা যায় না সেহেতু কেউ চাইলে আপনার ফোন থেকে আপনার সিমের তথ্য চুরি করতে পারবে না।
আমাদের ফোন যখন চুরি হয়ে যায় তখন চোর সর্বপ্রথম ফোন থেকে সিম কার্ডটি খুলে ফেলে ফোন সুইচ অফ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে ওই ফোন খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তবে ই সিম কার্ডেফোন থেকে বের করা যায় না। চাইলেও চোর আপনার ফোন চুরি করে বাচতে পারবে না। এতে খুব সহজেই আপনি চোরের লোকেশন ট্র্যাক করতে পারবেন।
ই সিম কার্ড এর খারাপ দিক
সিম কার্ডের এতকিছু ভালো থাকার পরেও এর কয়েকটি খারাপ দিক রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
তথ্য হারানোর ভয় – যদি কোন ফোন পানিতে পড়ে কিংবা ভেঙে নষ্ট হয়ে যায় সেক্ষেত্রে সিম কার্ড নষ্ট সম্ভাবনা খুব কম থাকে। তখন আমরা সিম কার্ডটি ফোন থেকে বের করে অন্য ফোনে ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু ই সিম কার্ড যেহেতু non-removable অর্থাৎ ফোন থেকে বের করা যায় না সেহেতু ফোন কোন ভাবে নষ্ট হয়ে গেলে আমরা আমাদের সিম কার্ডের তথ্য হারিয়ে ফেলবো।
তবে এই সমস্যার সমাধান রয়েছে। ই সিম সাপোর্টেড ফোনে আপনার ই সিম কার্ডের মধ্যে থাকা সকল তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড স্টোরেজের ব্যাকআপ করে রাখার সুযোগ থাকে। অর্থাৎ আপনি যদি ক্লাউড স্টোরেজ যেমন গুগোল ড্রাইভ এর সাথে আপনার ই সিম এর ব্যাকআপ চালু রাখেন সে ক্ষেত্রে আপনার সকল ডাটা ক্লাউড স্টোরেজে সংরক্ষিত থাকবে। আমার ফোন হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলেও আপনি অন্য ই সিম সাপোর্টেড ফোনে সেই তথ্য সহজেই রেস্টোর করে নিতে পারবেন।