May 21, 2025

মেটাভার্স: ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি কী ও কীভাবে কাজ করে?

0
Meta-Planets-img-16x9-1

“মেটা” শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ “গণ্ডির বাইরে”

এমন এক বিশ্বের কথা ভেবে দেখুন যেখানে একটি কোম্পানি তাদের নতুন মডেলের একটি গাড়ি তৈরি করার পর সেটা অনলাইনে বাজারে ছেড়ে দিল এবং একজন ক্রেতা হিসেবে আপনি বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে গাড়িটি চালিয়ে দেখতে পারলেন।

অথবা ঘরে বসে অনলাইন শপিং করার সময় একটি পোশাক পছন্দ হলো। ওই পোশাকের একটি ডিজিটাল সংস্করণ গায়ে দিয়ে দেখার পরই আপনি জামাটি কেনার জন্য অর্ডার দিলেন।

বিষয়টা হয়তো বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সাই-ফাই মুভির মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখন আর সেটা কল্পনার পর্যায়ে থাকছে না। এরকম এক প্রযুক্তি তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু করে হয়ে গেছে।

এই প্রযুক্তির ফলে অনলাইনের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে সত্যিকারের বাস্তব পৃথিবীর মতো।

ধরা যাক ফেসবুকে আপনার একজন বন্ধু পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার অপূর্ব কিছু ছবি পোস্ট করেছেন। ফেসবুক দেখার সময় এই প্রযুক্তির কারণে মনে হবে আপনিও সেখানে উপস্থিত আছেন।

আর যে প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব ঘটবে তার নাম মেটাভার্স।

মেটাভার্স কী

বলা হচ্ছে, মেটাভার্সই হবে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, মেটাভার্সের কারণে ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতকে মনে হবে বাস্তব জগতের মতো যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। মেটাভার্স প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি কোন কিছু শুধু দেখতেই পাবেন না, তাতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতেও সক্ষম হবেন।

তথ্য-প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, “এটাকে থ্রি-ডি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড বলতে পারেন। স্ক্রিনে এখনকার বেশিরভাগ স্পেস হচ্ছে টু-ডি বা দ্বিমাত্রিক। কিন্তু মেটাভার্স জগতে আমাদের অভিজ্ঞতা হবে থ্রি-ডির মতো। টেলিফোনে কারো সঙ্গে কথা বললে মনে হবে সামনা-সামনি আলাপ করা হচ্ছে।”

সাধারণ মানুষের কাছে মেটাভার্স প্রযুক্তিকে আপাতত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর-এর কোন সংস্করণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি আসলে তার চেয়েও অনেক বেশি।

প্রযুক্তিবিদদের মতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে মেটাভার্সের তুলনা আজকের দিনের স্মার্ট-ফোনের সঙ্গে আশির দশকের মোবাইল ফোনের তুলনা করার মতো।

বর্তমানে ভিআর বেশিভাগ ক্ষেত্রে অনলাইন গেমিং-এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু মেটাভার্সের ব্যবহার হবে সকল বিষয়ে- অফিসের কাজ থেকে শুরু করে খেলা, কনসার্ট, সিনেমা, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার বেলাতেও।

ফেসবুক: মেটা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির কর্পোরেট নাম, এর কারণ কী?

একটি বড় রি-ব্র্যান্ডের অংশ হিসাবে ফেসবুক এতদিনের কর্পোরেট পরিবর্তন করে মেটা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এটির পরিসর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাড়িয়েছে। ফলে এখন একটি জায়গায় সবকিছু আরো ভালভাবে “অন্তর্ভুক্ত” করা যাবে।

তবে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্মগুলোর কোন নাম পরিবর্তন হচ্ছে না। নাম বদলাবে শুধুমাত্র তাদের মালিকানাধীন মূল কোম্পানির।

সম্প্রতি ফেসবুকের একজন কর্মচারী চাকরি ছাড়ার পর ওই কোম্পানি সম্পর্কে বিভিন্ন গোপন তথ্য ফাঁস করে। এরপর একের পর নেতিবাচক খবর প্রকাশ হতে থাকে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নাম পরিবর্তন করলো ফেসবুক।

ফ্রান্সেস হাউগেন কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেছিলেন, তারা গ্রাহকদের “নিরাপত্তার চেয়ে কোম্পানির মুনাফাকে” প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

২০১৫ সালে গুগল তাদের মূল কোম্পানির নাম বদলে অ্যালফাবেট রাখে। তবে এই নামটি সামনে আসেনি।

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এই নতুন নাম ঘোষণা করেন। তিনি মূলত “মেটাভার্স” নামে একটি অনলাইন দুনিয়া তৈরির পরিকল্পনা উন্মোচন করেছেন – যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল পরিবেশে ভিআর হেডসেট ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি, গেইম খেলা এবং যোগাযোগ করতে পারবে।

তিনি বলেছেন যে, “আমরা যা কিছু করছি এবং ভবিষ্যতে করবো, সেটা বিদ্যমান ব্র্যান্ডটি সম্ভবত উপস্থাপন করতে পারছে না, তাই পরিবর্তন দরকার।”

“আমি আশা করি যে সময়ের সাথে সাথে আমাদের মেটাভার্স কোম্পানি হিসাবে দেখা হবে। আর আমরা সামনে যা তৈরি করতে যাচ্ছি, সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের কাজ ও পরিচয় গড়ে উঠবে।” এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।

মি. জাকারবার্গ বলেন, “আমরা এখন আমাদের ব্যবসাকে দুটি ভিন্ন অংশ হিসাবে দেখছি, একটি অংশ আমাদের অ্যাপস পরিবারের জন্য এবং আরেকটি অংশ ভবিষ্যতের প্ল্যাটফর্মে কাজের জন্য৷”

“আর এর অংশ হিসাবে আমাদের সময় এসেছে একটি নতুন কোম্পানি ব্র্যান্ড গ্রহণ করা, যাতে আমরা যা কিছু করি, আমরা কে এবং আমরা কী তৈরি করতে চাই – এই বিষয়গুলোকে প্রতিফলিত করে।”

কোম্পানিটি বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে তাদের সদর দফতরে একটি নতুন সাইনবোর্ড উন্মোচন করে, তার থাম্বস-আপ “লাইক” লোগোটিকে সরিয়ে একটি নীল অসীম আকৃতির লোগো বসিয়েছে।

মি. জাকারবার্গ বলেন, সময়ের সাথে সাথে ব্যবহারকারীদের কোম্পানির অন্যান্য পরিষেবাগুলো ব্যবহারের জন্য আর ফেসবুক ব্যবহার করা লাগবে না। নতুন নামটি সেই বিষয়টি প্রতিফলিত করে। “মেটা” শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ “গণ্ডির বাইরে”।

একজন বহিরাগতের কাছে, মেটাভার্স দেখতে ভিআর-এর একটি সংস্করণের মতো হতে পারে, কিন্তু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে এটি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হতে পারে।

সেখানে মানুষ কম্পিউটারে কাজ করার পরিবর্তে, মেটাভার্স নামের ভার্চুয়াল জগতে হেডসেটের সাহায্যের প্রবেশ করতে পারবে। যেখানে সব ধরণের ডিজিটাল পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যাবে৷

আশা করা হচ্ছে যে, ভার্চুয়াল জগতটি কাজ, খেলা এবং কনসার্ট থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্যও ব্যবহার করা যাবে।

ফেসবুক বলছে, তারা পহেলা ডিসেম্বর থেকে নতুন স্টক টিকার এমভিআরএস-এর অধীনে তাদের শেয়ার লেনদেন শুরু করতে চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + 15 =